1. live@www.jashorebulletin.com : যশোর বুলেটিন : যশোর বুলেটিন
  2. info@www.jashorebulletin.com : যশোর বুলেটিন :
বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন

বেসরকারি অপারেটরের পরিবর্তে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর

প্রতিনিধির নাম :
  • প্রকাশিত: বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫
  • ১৬২ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা অফিস : চট্টগ্রাম বন্দরে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল(এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব  চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এক যুগেরও বেশী সময় ধরে এনসিটি পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ার টেক-এর  হাত থেকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব বন্দরের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, চুক্তি শেষ হওয়ায় আগামী ৬ জুলাই সাইফ পাওয়ার টেক তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে এনসিটি থেকে।  ৭ জুলাই থেকে শুরু হবে  চট্টগ্রাম বন্দরের অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতার পরীক্ষা। আগামী ৬ মাস এনসিটি চালাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ । এজন্য প্রতি মাসে ৭ কোটি টাকা হিসাবে ৪২ কোটি টাকার ব্যয় বরাদ্দ চেয়েছে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে।

এরই মধ্যে নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী গত শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলাপ করে এনসিটি পরিচালনার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক)  সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, সাইফ পাওয়ার টেক এর সাথে করা চুক্তি আর নবায়ন হচ্ছেনা। আগামী ৭ জুলাই থেকে এনসিটি বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে আসবে এবং বন্দরের জনবল ও বিদ্যমান যন্ত্রপাতি দিয়ে পণ্য ওঠানামার অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এনসিটি অপারেশনাল কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সহযোগিতা নেয়ার কথাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় রেখেছেন। তবে তা এখনো চূড়ান্ত নয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্ববৃহৎ কনটেইনার টার্মিনাল এনসিটি । ২০০৭ সালে ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই টার্মিনাল নির্মাণ করে। তবে কার্যক্রম শুরু করতে কয়েক বছর লেগে যায়। এই টার্মিনালে ৫টি জেটি রয়েছে। রয়েছে কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট। চট্টগ্রাম বন্দরের ৪টি কনটেইনার টার্মিনালের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিউমুরিং কনটেইনারের অবকাঠামো নির্মাণ শেষে বিদেশি একাধিক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব বিনিয়োগে ইকুইপমেন্ট স্থাপন করে টার্মিনালটি পরিচালনার আগ্রহ দেখিয়েছিল। সেসময় বন্দর কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক দরপত্রও আহ্বান করেছিল। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যবসায়িক তথা রাজনীতিকের দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ আয়-উপার্জনের লোলুপ দৃষ্টি পড়ার কারণে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব তাদের অনুগত সাইফ পাওয়ার টেক এর হাতে চলে যায়। সাইফ পাওয়ার টেক এর কর্ণধার তরফদার রুহুল আমীন আওয়ামী ঘরানার ব্যবসায়ী এবং আওয়ামী লীগের অর্থ যোগান দাতাদের অন্যতম।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, সাইফ পাওয়ার টেক পলাতক স্বৈরাচারের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে একচেটিয়া  ব্যবসা করেছে। এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর এ পর্যন্ত ১২ বার চুক্তি নবায়ন করেছে। প্রতিবারই এর পেছনে ফায়দা লুটে নিয়েছে শেখ পরিবারের সদস্যসহ আওয়ামী লীগের বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতা। সাইফ পাওয়ার টেক এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিশেষ সুবিধাভোগি সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন, শেখ হেলাল, শেখ সেলিম, সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, সাবেক প্রতি মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ( জাবেদ), সাবেক এমপি আল ইসলাম জ্যাকব, চট্টগ্রামের সাবেক এমপি ও ব্যবসায়ী নেতা এম এ লতিফ, মাহফুজুর রহমান, গোলাম কিবরিয়া টিপু, ফিরোজ আহমদ স্বপন, হাবিবুন নাহার, আবদুস সবুর, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আজম নাছির উদ্দিন।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে যাবার আগে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি টার্মিনালকে দুবাই ভিত্তিক অপারেটর ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। ডিপি ওয়ার্ল্ড এর বিশেষজ্ঞ লোকজন কয়েক দফা চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনও করেছেন। শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী নেতাদের সেই সুযোগ হয়নি।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী স্টেকহোল্ডারদের মতে এনসিটি চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব জনবল দিয়েই পরিচালিত হওয়া দরকার। বর্তমান সরকারও এনসিটি পরিচালনায় বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর অভিপ্রায় নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনায় আগামী ৬ মাসের জন্য দায়িত্ব দিচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে এনসিটিতে কনটেইনার পরিবহনের জন্য ট্র্যাক্টর, ট্রেইলরসহ প্রাইম মুভার সরবরাহকারীদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (মেকানিক্যাল) এসএম হাবিবুল্লাহ আজিম দরপত্র আহ্বান করেন। এটি সাইফ পাওয়ার টেক থেকে এনসিটি নিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ বলে উল্লেখ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। আগামীকাল বুধবার (২ জুলাই) পর্যন্ত দরপত্র ক্রয় এবং ৩ জুলাই পর্যন্ত জমা দেয়া যাবে। একই দিন টেন্ডার খুলে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে উল্লেখ করে বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা বাসসকে বলেছেন, আগামী ৭ জুলাই থেকে কন্টেনার পরিবহনে যাতে কোন সমস্যা না হয় সে জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে প্রাইম মুভারের এই খরচের যোগান দেবে। প্রাইম মুভার সরবরাহকারীকে এর ড্রাইভার, জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুরই যোগান দিতে হবে বলে দরপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

বার্থ শিপ হ্যান্ডলিং ও টার্মিনাল অপারেটর  অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এনসিটি পরিচালনার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তিনি বলেন, কিছুদিন কনটেইনার লোড আনলোড করতে গিয়ে সাময়িক সমস্যা সৃষ্টি হলেও তা দ্রুত মাধান হয়ে যাবে। প্রয়োজনে অফ ডক থেকে অভিজ্ঞ লোক এনে সহযোগিতা নেয়া যায়।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, এনসিটি  পরিচালনা কে করলো তা মুখ্য নয়, বরং কতটা দ্রুত সেবা পাওয়া যায় তা দেখতে হবে।  এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর ট্রেড ইউনিয়নের চাপের বাইরে এসে দেশ ও জাতির স্বার্থে এনসিটি অপারেশন করতে পারলে সকলেই উপকৃত হবে।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট