
যশোর অফিস : সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিতে গড়ে ওঠা বেনাপোল বন্দরে কথিত ভাই ভাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই দেশে প্রবেশ করছে মিথ্যা ঘোষণার বিভিন্ন ধরনের আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য। এ তালিকায় রয়েছে অস্ত্র ও নেশা জাতীয় ঔষধের চালান,সাপের বিষ,মোবাইল,মোবাইল ডিসপ্লে,ব্লেড ও উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্যে। তবে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে এই চক্র। ৫ই আগস্ট পরবতর্ীতে এই সিন্ডিকেটের কয়েকটি চালান আটক হলেও অদৃশ্য ছোঁয়াই কোন ব্যবস্থা নেইনি কাস্টমস ও বন্দর কতৃপক্ষ।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ইয়ার্ড টার্মিনালে ভারতীয় কাঁচা মরিচবাহী একটি ট্রাক হতে ( সিজি-০৪পিইউ-৫২৮৮) ১টি এয়ার পিস্তল ও ৯৩ রাউন্ড গুলিসহ ভারতীয় চালক ও হেলপারকে আটক করে ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। আটককৃতরা হলো-গুরুজীত সালুজা (৩১) ও হেলপার রাম দাস নাওয়াদি (২৪)। যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ট্রাক হতে অস্ত্র উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,গ্রেফতারকৃত ভারতীয় চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে আইনানুগ পক্রিয়া চলামান রয়েছে।
বেনাপোল কার্গো শাখা সূত্রে জানা যায়,ভারতীয় রপ্তানী কারক সেন শিপিং লাইন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ রপ্তানীকৃত ১৯৪ বস্তা কাঁাচাঝাল (ওজন ১১টন) ভর্তি ট্রাক চালকের হেফাযতে রাখা পিস্তল ও গুলি উদ্ধার পূর্বক গাড়ীর চালক ও হেলপার দুই ভারতীয় নাগরিককে আটক করে বিজিবি।
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কার্গো শাখার দায়িত্বে থাকা রাজস্ব কর্মকর্তা আবু তাহের মুঠো ফোনে জানান,বিজিবি কতর্ৃক আমদানি পণ্যের ট্রাক হতে অস্ত্র উদ্ধারের কথা শুনেছি,এর বেশী তথ্য আপতত জানা নেই।
বন্দর তথ্য সূত্রে জানা যায়, পণ্য চালানটির বাংলাদেশী আমদানি কারক প্রতিষ্ঠান শিমু এন্টারপ্রাইজ ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বেনাপোলের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান ওমর এন্ড সন্স। সাম্প্রতিক পেট্টাপোল বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় ভারতীয় ৫ ট্রাক পণ্য চালান আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিএসএফ ও ভারতীয় কাস্টমস কতর্ৃপক্ষ।
ভারতীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য মতে আনুমানিক ১৫ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য চালানটির বাংলাদেশী আমদানি কারক জামান ট্রেডার্স যাহার মালিক হাসানুজ্জামান এই ভাই ভাই সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা। হাসানুজ্জামানের আমদানিকৃত পন্য চালানগুলো কাস্টমস হতে ছাড় করানোর কাজ করে থাকেন ভাই ভাই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য অস্ত্রসহ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে অস্ত্র মামলায় জেল খাটা আসামী দূর্গাপুরের আজিম।
এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আজিম ও হাসানুজ্জামানের সাথে যোগাযোগের চেষ্ঠা চালালেও তাদের সাক্ষাৎ না পাওয়ায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নী।
তবে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বক্তব্য অনুযায়ী ওমর এন্ড সন্স এর মালিক ইউসুপ আলী জানান,তার নামে ইস্যুকৃত লাইসেন্সটি তিনি চুক্তিতে আজিমকে কাজ করতে দিয়েছেন।
স্থানীয় একাধিক তথ্য সূত্র হতে জানা যায়,গত ২৪ আগস্ট শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে নবাগত বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার কতর্ৃক বরখাস্ত হয় রায়হান নামের একজন সিপাহী। একই ঘটনায় বাঁশকল শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এফ এম ফয়সাল ও খায়রুজ্জামানকে শোকজ করা হয়েছে। ঘটনার বর্ননায় জানা গেছে,মিথ্যা পণ্য ঘোষণা বোঝাই ট্রাক পারাপারে সাহায্য করতে রেজিস্টার এন্ট্রি খাতায় গাড়ী নাম্বার (খুলনা মেট্রো- ১১-১২৪৪) এর স্থলে খুলনা মেট্রো- ১১-১২৪২ ভুল লিখে রাখে। ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান চালালে দেখা যায় মোটরপার্স বোঝাই ঐ পণ্য চালানটির ছাড় করনের দায়িত্বে ছিলে বিতর্কিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট করিম এন্ড সন্স।
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিগত ২৮ জুন ২০২৫ ভারত হতে আনা বিপুল পরিমান আমদানি নিষিদ্ধ ঔষধের চালান জব্দ করে কাস্টমস কতর্ৃপক্ষ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বেনাপোল কাস্টমস হাইসের যুগ্ন কমিশনার মির্জা রাফেজা তৎসময়ে জানান,বেনাপোল বন্দরে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত হতে আনা নিষিদ্ধ পন্যের চালানটি জব্দ করা হয়েছে। বেনাপোল বন্দরে দীর্ঘ সময় ধরে হাদি,আজিম,সোহাগ,সামাদ,মোহাম্মদ,আকবর,জাফর,শাহীন,শরিফুল নামের চিহ্নিত শুল্ক ফাঁকি বাজ চক্রের সদস্যরা কথিত ভাই ভাই সিন্ডিকেট গড়ে তুলে সরকারী রাজস্ব ফাঁকির ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে যা কাস্টমস ও গোয়েন্দা সদস্যদের সুষ্ঠ তদন্তে বেরীয়ে আসবে বলে সূত্রটির দাবি।
এ ছাড়ও এই চক্রটি বহুদিন ধরেই আমদানি পণ্য চালানের সাথে অবৈধ্য অস্ত্র,গুলি,ম্যাগজিন ও ভায়াগ্রার মত মাদক এনে তা বন্দর হতে কৌশলে বের করে নিচ্ছে বলে আরো জানা গেছে। শুল্ক ফাঁকি চক্রের গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারালেও ফুঁলে ফেঁপে ওঠছে ওসাধু ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তারা।
অতিদ্রুত ভাই ভাই সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে বেনাপোল বন্দরের শৃঙ্খলা নষ্টসহ সচ্ছ ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশংকা করছেন স্বচ্ছ আমদানিকারকরা।
কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, বেনাপোল বন্দরের শেড ইনচার্জ, স্কেলের দায়িত্বে থাকা কাস্টমস কর্মকর্তা, আইআরএম টিম ও শুল্ক গোয়েন্দা হাতে গোনা ২/৩ টি প্রতিষ্ঠানের গোপন যোগসাজসে পূর্ব চুক্তি মোতাবেক শুল্ক ফঁাকি দিতে ভারত থেকে এমন পণ্য চালান আমদানি করা হয়। এসব তারই অংশ। বাংলাদেশে এসব পণ্যের পরীক্ষণ গ্রুপ (আইআরএম) টিমের মাস্টার মাউন্ড কর্মকতার্র নির্দেশে নাম মাত্র পরীক্ষণে মোটা টাকার বিনিময়ে খালাশ হয়ে থাকে।
Like this:
Like Loading...