বাগেরহাট বাসস : আসন্ন ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে পূর্ব সুন্দরবনে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে । বাতিল করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোরবানির ছুটি।
লম্বা সরকারি ছুটির সুযোগে বন্যপ্রাণী চোর চক্র সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে- এমন আশঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ।
আজ পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এ তথা জানা গেছে।
জানা গেছে, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের আওতায় থাকা দুটি রেঞ্জের (শরণখোলা ও চাঁদপাই) ২’লাখ ৪৩’হাজার হেক্টর বনভূমি সুরক্ষায় ৩১’টি ইউনিট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে জোরদার করা হয়েছে কম্বিং অপারেশন।
বন বিভাগের সূত্র মতে জানা যায়, প্রায় এক মাস আগে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) হিসেবে মো. রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বনের সুরক্ষায় বেশ কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ নওয়া হয়েছে। বিশেষ করে অবৈধ মাছ ও হরিণ শিকার রোধে চালু করা হয়েছে পায়ে হেঁটে প্যারালাল লাইন সার্ভে, ফুট পেট্রোলিং, প্রযুক্তির ব্যবহার ও গোয়েন্দা নজরদারি।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে সাফল্য পায় বন বিভাগ, এ সময় শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের বনাঞ্চল থেকে জব্দ করা হয় ৪২ কেজি হরিণের মাংস, ৩টি হরিণের মাথা,উদ্ধার করা হয়েছে হরিণ ধরার মালা ফাঁদ, তিন টন অবৈধ জাল, বিষ যুক্ত ৯৫কেজি মাছ, তিন বোতল কীটনাশক, ২২৬টি নিষিদ্ধ ‘চারু’ (কাঁকড়া ধরার ফাঁদ) এবং ১১টি নৌকা ও ট্রলার। গ্রেপ্তার করা হয় আট জনকে। এ সময় বন আইনে ৩৭’টি মামলা করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, বন বিভাগ আশঙ্কা করছেন, আসন্ন কোরবানির ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে চোরা শিকারি চক্র ফের তৎপর হতে পারে। বিশেষ করে হরিণ শিকার ও সংরক্ষিত এলাকায় বিষ দিয়ে মাছ ধরার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। এ জন্য এবার অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
বন রক্ষীরা বিভিন্ন টহল ফাঁড়ি ও স্টেশনের আওতাধীন বনে টহল জোরদার করেছেন। গঠন করা হয়েছে একাধিক পায়ে হাঁটা টহল দল। গহিন বনে অভিযান চালানো হচ্ছে নিয়মিত। এর পাশাপাশি বনের পেশাজীবী ও স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সভা আয়োজন এবং লিফলেট বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বন্য প্রাণী চুরি ও শিকারের বিষয়ে তথ্য দিলে পুরস্কার দেয়ার কথাও ঘোষণা করেছে বন বিভাগ।
এ বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বন,বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কর্দমাক্ত ও নদী-খাল বেষ্টিত এই বিশাল বনভূমি সীমিত জনবল নিয়ে রক্ষা করা কঠিন হলেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এবারের ঈদ-উল-আজহায় পূর্ব সুন্দরবনের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীরা ছুটিতে যাচ্ছেন না- এটি একটি ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত। গত মাসের কম্বিং অপারেশনে ভালো ফল মিলেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে যেন কোনো অপতৎপরতা না ঘটে, সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বন বিভাগ।