নিজস্ব প্রতিবেদক :যশোরের ঝিকরগাছায় অসহায় কৃষক পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তি জবরদখলের ঘটনায় বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা। যার মামলা নম্বর পি-৬১০/২৫।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ঝিকরগাছা থানার মাঠশিয়া গ্রামের মৃতঃ কাদের গাজীর কন্যা রোকেয়া খাতুন মাটশিয়া মৌজার ১২৮৬ নং খতিয়ানের ১২৭৩ ও ১২৭৪ নং দাগের ২একর ২৪শতাংশ জমির ০.১৩৩ অংশ মোতাবেক প্রাপ্ত বেদখলি জমি ফেরত পাওয়া ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ৪জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। বিজ্ঞ আদালত ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ ও সহকারী কমিশনার ভূমি’কে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ প্রদান করেন। ঝিকরগাছা থানা অফিসার ইনচার্জ উভয়পক্ষকে নোটিশ প্রদান করত: শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নিমিত্তে উক্ত জমিতে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ, আকার আকৃতি পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা ঘর নির্মাণ করিতে নিষেধ প্রদান করেন। কিন্তু জবরদখলকারীরা থানার নির্দেশ অমান্য করিয়া সেখানে ঘর নির্মাণকালে বাদীপক্ষ বাধা প্রদান করেন এবং স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। এরপর বাদীপক্ষ বিজ্ঞ আদালতে হাজির হয়ে উক্ত জমিতে ১৪৪ ধারা জারির আবেদন করেন। বর্তমানে উক্ত জমিতে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকার পরও আসামীগণ জমির অপরপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকালে বাদীপক্ষ পুনরায় বাধা প্রদান করেন। আসামীগণ বাদীপক্ষের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতে হয়রানিমূলক চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বেও আসামীরা বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক চাঁদাবাজির অভিযোগ করলে সেটি খারিজ হয়ে যায়।
জমি জবর দখলের বিষয়ে মামলার বাদী রোকেয়া খাতুন জানান, আমার পিতা জমিটি কিনে চাষাবাদ করতেন। আমার ভাই বিদেশ যাওয়ার পর জোরপূর্বক আমার চাচা ও তার পরিবার দখল করে নিয়েছে। আমরা আমাদের জমিটি ফেরত চাই।
এবিষয়ে মৃতঃ আব্দুল কাদেরের ছেলে মশিয়ার রহমান তাপু বলেন, আমি একজন সাধারন কৃষক। আমি মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর আমার চাচা ও তার পরিবার ওই জমি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। তারা আওয়ামীলীগের বড় পদে থাকায় আমাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের জমিতে যেতে দিতো না। আমি আইনের নিকট আমার পৈত্রিক অংশ ফেরত পাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মৃতঃ আব্দুল কাদেরের আরেক কন্যা পারুল বেগম জানান, আমার পৈত্রিক সম্পত্তি জোরপূর্বক আমার চাচা ও তার পরিবার দখল করে রেখেছে। আমরা ওই জমিতে দখল দিতে গেলে তারা আমাদের নামে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দিচ্ছেন। আমি আইনের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।
মামলার আসামী আব্দুল করিমের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই খতিয়ানে দুটি দাগ রয়েছে। আমরা ১২৭৪ নং দাগে স্থাপনা নির্মান করছিলাম। ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করায় আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। ১২৭৩ দাগে একটি ঘর ও সীমানা প্রাচীর নির্মানকালে বাদীপক্ষ এসে সেগুলো ভেঙ্গে দিয়েছে।
আব্দুল করিমের কন্যা শাহানারা খাতুন জানান, আমাদের জমি জায়গা সংক্রান্ত একটি ঝামেলা ২০২০ সাল থেকে চলে আসছে। আমার বাবা উক্ত জমিতে বসবাস করছেন। আমরা অন্য চাচাদের নিকট থেকে জমি মোখিক এওয়াজবদল করে নিয়েছি। আমাদের কোন লিখিত ডকুমেন্টস নেই। আমার বাড়িতে অনেকগুলো গরু থাকায় চুরি যাওয়ার ভয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকালে আমার চাচাতো ভাই ও তার পরিবারগণ নির্মানকাজে বাধা দেন এবং প্রাচীর ভেঙ্গে দেন। আমি এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।
উল্লেখ্য, মামলার আসামী আব্দুল করিমের কন্যা শাহানারা খাতুন বাদী হয়ে মশিয়ার রহমান তাপুসহ ৭জন ও অজ্ঞাতনামা ৮/১০জনকে আসামী করে গত ২৩/০৮/২০২৫ ইং তারিখে বিজ্ঞ আদালতে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নং সিআর ৭৬৬/২৫।
পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনায় এলাকায় চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভুক্তভোগী রোকেয়া খাতুন ও তার পরিবার বিজ্ঞ আদালত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছেন।