
নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে উৎসবমুখর পরিবেশে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে জুলাই গণ অভ্যুত্থান দিবস। সকাল ৯টায় জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য্য দিয়ে দিবসের সূচনা হয়। বিজয়ের এক বছর পূর্ণ হলেও শহীদ এবং যোদ্ধাদের যে লক্ষ্য ছিলো তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিমত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের। তবে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষে এক হয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট মাসে সংগঠিত ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। বাংলা ছাত্র জনতার এই অভ্যুত্থান দেশের মানুষের জন্য নিয়ে এসেছে মুক্তির বার্তা দিয়েছে স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ। যাদের আত্মত্যাগে এ বিজয় এসেছে তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে আজ যশোরে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে চুলায় গণঅভ্যুত্থান দিবস। সকাল ৯টায় যশোর শহরের বকুলতলা মোড়ে নির্মাণাধীন জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য্য দিয়ে দিবসের সূচনা হয়। এসময় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিএনপি সরকারি দপ্তর, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এরপর বের হয় বর্ণাঢ্য র্্যালি। র্্যালি শেষে শিল্পকলা একাডেমিতে জুলাই শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের পরিবারের সম্মেলনে আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিজয়ের এক বছর পূর্ণ হলেও শহীদ এবং জুলাই যোদ্ধাদের যে লক্ষ্য ছিলো তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিমত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের। তারা শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি না করার আহবান জানান। একই সাথে জুলাই আহতদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসহ পুনর্বাসনের দাবী জানান।
শহীদ আব্দুল্লাহর পিতা আব্দুল জব্বার বলেন, সরকারের কাছে আমরা যে দাবি জানিয়েছিলাম তা এক বছরেও পূর্ণ হয়নি। আমাদের সন্তানরা জীবন দিয়ে ঠিকা বা ভুল করেছে কীনা সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত। তাদের রক্তের সাথে যারা বেঈমানি করবে তাদের কেয়ামত পর্যন্ত হিসেব দিতে হবে। কারণ শিক্ষার্থীরা আত্মাহুতি না দিলে নতুন বাংলাদেশ আমরা দেখতে পারতাম না। আমরা চাই শহীদদের আকাঙ্খা অনুযায়ী একটি বৈষম্যহীন ও মানবিক রাষ্ট্র গড়ে উঠুক।
শহীদ ইমতিয়াজ জাবেরের পিতা নওশের আলী বলেন, অনেক অভিযোগ রয়েছে। যেদিকে তাকাই ঝামেলা ঝঞ্জাট। যারা জীবন দিয়েছে তারা এমন দেশ দেখতে চায়নি। তারা শোষণম বঞ্চনা মুক্ত, সন্ত্রাস-রাহাজানি মুক্ত দেশ চেয়েছিলো। দুর্ভাগ্য সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমরা চাই দ্রুত জুলাই সনদ প্রকাশ করা হোক। আর সে অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা হোক।
আহত জুলাই যোদ্ধারা জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতার কারণে একবছরেও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ হয়নি। ফলে হতাশা আছে। আমরা চাই রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্য বজায় রাখুক। শহীদ পরিবার ও আহতদের পাশে থাকুক। তাদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।
তারা আরো বলেন, যশোরে ৮৪জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬জন কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। আমরা চাই দুর্নীতি ও শোষন মুক্ত দেশ গড়ার পাশাপাশি শহীদ পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন করা হোক। তাহলেই জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে বিরাজমান হতাশা দূরুভীত হবে।
এদিকে জুলাই যোদ্ধাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষে এক হয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধের দেশের সর্বস্তরের মানুষ লড়াই করেছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে এসেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনতার বিজয় হয়েছে। এ বিজয়কে অক্ষুন্ন রাখতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, এ দেশে বহুবার রাজনৈতিক পট পরির্বতন হয়েছে, কিন্তু মানুষের আকাঙ্খা পূরণ হয়নি। আমরা মনে করি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেই আকাঙ্খা পূরণ হবে।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোঃ আজাহারুল ইসলাম বলেন, আমরা শুরু থেকেই জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের পাশে ছিলাম। তাদের নানাভাবে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য সকল সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। যতদিন তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন হবে ততদিন জেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে। পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শীঘ্রই তারা এর বাস্তবায়ন হবে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর উদ্যোগে পৃথক বিজয় র্যালি বের করা হয়।
Like this:
Like Loading...