নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বিরক্তিকর যানজটকে প্রতিদিনের রুটিনের তালিকায় রেখে মণিরামপুর পৌরশহরে নিজের প্রয়োজন মেটাতে আসা সাধারণ মানুষ,ব্যাবসায়ী,অফিসিয়াল দপ্তরের কর্মজীবী,স্থানীয় ও যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের দূরপাল্লার যাত্রী সহ শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত গন্তব্যের উদ্দেশ্য দৈনিক যাত্রাকরে চলেছে।
ইতিপূর্বে যানজট নিরসনে ব্যাস্ততম মফস্বল শহর মণিরামপুর বাজারে সংকুচিত রাস্তা প্রসস্থ্য করনের দাবিতে বৃহৎ মানববন্ধনের পরপরই পথচারীর ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে এবং যানজট নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের নীরবতা প্রসঙ্গে দৈনিক যশোর বার্তা সহ স্থানীয় ও জাতীয় কয়েকটি পত্রিকায় লেখালেখির পর মণিরামপুর পৌরসভা প্রশাসন,রাজনৈতিক, সাংবাদিক,সেচ্ছাসেবী সংগঠন,মণিরামপুর সহকারি কমিশনার ভূমি,মণিরামপুর থানা পুলিশ সহ মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না চলতি ক্যালেন্ডারের এপ্রিল মাসের ১ম সপ্তাহে ৬ তারিখে আধাবেলা প্রধানসড়কের পাশ দিয়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদসহ বাজারের ব্যাবসায়ীদের কড়া হুশিয়ারি দিয়ে এক ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করেছিলেন।
অভিযানের তাপ কাটিয়ে ২/৪দিন পর থেকে আবার সেই চিরচেনা যানজট আর ব্যাবসায়ীদের ফুটপাত দখলের চিত্র ফুটে উঠতে থাকে। বাস্তবিক পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে পড়ে সেদিন আধাবেলার নামমাত্র অভিযানের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না’র সঠিক তদারকির অভাব এবং দায়িত্বপালনে সেচ্চাচারিতার কারনে যানজটের সাথে সাথে ফুটপাতে অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে।পথচারীদের সাথে দখলদারদের অসাধ আচরন! অতিরিক্ত জায়গা দখলে নিয়ে আইন অমান্য! ফুটপাত দখলের হিড়িকি! এ রকম একাধিক অভিযোগ জানালেও কোন রকম ব্যাবস্থা নিচ্ছেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না।
এদিকে জুলাই মাসের ২৩ তারিখে ভোর রাতে আনুমানিক ৪টা থেকে ৪ঃ৩০মিঃ নাগাত মণিরামপুর থানার পুলিশের নাকের ডগায় পৌরশহরের সোনালী ব্যাংকের সামনে ইজিবাইক, অটোভ্যানের যন্ত্রাংশের দোকান বিশ্বাস অটো ও প্রধান সড়কের ধানহাটার একই শ্রেনীর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সালমা অটো হতে ৪/৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র ১টি মিনি পিকআপ যোগে ২টি দোকান হতে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি করে নেওয়ার ঘটনায় ১ সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও মণিরামপুর থানা পুলিশ এখনো পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের কোন রকম আশার আলো দেখাতে না পারাতে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি দেখা গেছে! এমনটাই আলোচনা-সমালোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাড়িয়েছে সচেতন মহলের কাছে।
গত এপ্রিলে চলমান ঐ অভিযানে সে সময় দায়িত্বে থাকা মণিরামপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ গাজী যানজট এড়াতে সমস্ত ছোট বড় যানবাহনের ড্রাইভারদের সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেন। সেদিন প্রখর রোদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে সমস্ত বাজার পায়ে হেটে অভিযান শেষে পৌরসভা কার্যালয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,সাংবাদিক,ব্যাবসায়ীদের উদ্দেশ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জানান যানজট এড়াতে একনেক ছাড়া রাস্তা প্রসস্থ্যের কোন সমাধান নাই। সে সময় তিনি আরো বলেন,হয়তো একনেক জানেওনা মণিরামপুর বাজারের রাস্তাটি সংকুচিত আছে! সেখান থেকেই মণিরামপুর বাজারের যানজটকে ঢাকা শহরের মতোই নিত্য নৈমেত্তিক একটি সমস্যা মেনে নিয়েছে মণিরামপুর বাসী।
তবে যানজটের ভোগান্তি লাঘবে সম্প্রতি পৌরসভার মণিরামপুর বাজারের প্রান কেন্দ্র রাজগঞ্জ মোড়ে একজন বৃদ্ধ বয়সী পরিছন্নতা কর্মীকে ট্রাফিক হিসাবে দেখতে পাওয়া গেলেও বর্তমানে মুলত এই পরিছন্নতা কর্মীর অদক্ষতাসম্পন্ন বেভুলা সিগন্যালে যানজট নিরসনের পরিবর্তে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তির পাল্লা ভারি করে তুলেছে।
সড়কের যানজটের সাথে ফুটপাত দখলে বেড়েছে দখলদার ব্যবসায়ীদের লোলুপ দৃষ্টি।এমনকি রাস্তার উপরই ভাসমান ছোট ছোট ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানও লক্ষ্য করা যায়।ভুক্তভোগী ও ব্যাবসয়ীদের অভিযোগ,গেলো ৬মাসের বেশি একেবারে নিরব ভূমিকা পালন করছে মনিরামপুর উপজেলা প্রশাসন। তারা বলছেন,বিগত সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভূমি বিভিন্ন সময়ে যানজট নিরসন ও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে ক্যাম্পেইন, মোবাইল কোর্টসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও বর্তমানে তেমন কোন ভূমিকা নিতে দেখা যায়না মনিরামপুর উপজেলা প্রশাসনের।উপজেলা প্রশাসনের এই নিরাবতাকে নেতীবাচক হিসাবে দেখছেন সুশীল সমাজ ও ব্যাবসায়ী মহল।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেইন সড়কের কলাহাটা,খুচরা কাঁচা বাজার, মুদিপট্টি,গার্মেন্টসপট্টি সহ প্রতিটি মার্কেটের দোকানীরা তাদের নির্দিষ্ট জায়গা বাদেও ১/২ হাত জায়গা দখলে নিয়ে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে।একদিকে ফুটপাত দখল করছে,অপরদিকে তার কারনে অলিগলিতেও যানজটে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা।
দখলদারিত্বের বেশি প্রভাব পৌরসভার সামনে রাস্তার দু’পাশ দিয়ে হার্ডওয়্যার,কসমেটিকস,লেদার ও ব্যাগের দোকান,খাবার হোটেল,প্লাস্টিক পন্যের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যাবসায়ীরা পথচারীর হাটার ফুটপাতকে দোকানের আঙ্গিনা হিসাবে নানান পন্য সামগ্রিই ঝুলিয়ে দোকানের প্রসার বাড়িয়েছে।
অভিযোগ আছে,দক্ষিনমাথা বাসস্টান্ডের বাস দাড়ানোর নির্ধারিত রাস্তাসংযুক্ত সরকারি জায়গায় পার্শবর্তী প্লাস্টিক সামগ্রী দোকানদার জৈনক রতন মিয়া তার বিক্রয়ের জন্য সারি সারি চেয়ার সাজিয়ে পথচারিকে অন্য পাশ দিয়ে ঘুরে যেতে বাধ্য করে চলেছে। কারন জানতে চাইলে রতন দম্ভভরে বলেন,এ জায়গার জন্যও পৌরসভাকে আমি অতিরিক্ত ট্যাক্স দিয়ে থাকি,এ জায়গা আমার। দুঃখজনক হলেও সত্য যে,এ অভিযোগটি এই প্রতিবেদক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করার সপ্তাহ পার হলেও নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা,বহাল তবিয়তে পথচারীর ফুটপাতের উপর অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্বের পসরা।
জনভোগী এমন অভিযোগ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদে অবৈধ স্থাপনা দেখেও কিভাবে একজন উপজেলা নির্বাহী প্রধান হয়ে পদক্ষেপ না নিয়ে থাকেন! সেটাই ভাবিয়ে তুলেছে ফুটপাতের ভুক্তভোগী পথচারী ও জন সাধারণের কাছে।
পথচারীর ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পরবর্তী কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা জানতে মুঠোফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না’কে না পাওয়া গেলেও অচিরেই এ সমস্ত দখলদারদের।