1. live@www.jashorebulletin.com : যশোর বুলেটিন : যশোর বুলেটিন
  2. info@www.jashorebulletin.com : যশোর বুলেটিন :
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদারের বদলি শার্শার গোগা সীমান্তে বিজিবির অভিযানে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেনসিডিল উদ্ধার স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে ঝিনাইদহে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কর্মশালা যশোরে মাদকবিরোধী অভিযানে ২ কেজি গাঁজা উদ্ধার, নারী গ্রেফতার যশোরে তৃতীয় বর্ষে রূপান্তর প্রতিদিন তৃতীয় বর্ষের পদার্পন যশোর অভয়নগরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশুর মৃত্যু যশোরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চিকিৎসক নিহত ভাড়ার টাকা না দেয়ায় অ্যাড. জনির  বিরুদ্ধে সমিতিতে অভিযোগ, শো-কজ যশোর-২ আসনে জামায়াতের মোসলেহ উদ্দিন ফরিদ প্রার্থী চট্টগ্রামের যুবককে যশোর এনে মারপিট ও কীটনাশক খাওয়ায়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে স্ত্রীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ও বাঁচলে আমরা শেষ”টেনে-হিঁচড়ে উল্লাসে সোহাগকে খুন, মব সাজিয়ে রক্তাক্ত বার্তা!

প্রতিনিধির নাম :
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫
  • ১১৫ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি, রাকিবুল ইসলাম মিঠু: পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে দিনদুপুরে টেনে-হিঁচড়ে আনা হলো এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে। এরপর শুরু হয় বীভৎস পিটুনি। কনক্রিটের পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত। এরপর উল্লাস, লাফানো, গর্জন— যেন আগুনে পেট্রোল ঢালছে খুনিরা। লোক জড়ো করে বানানো হলো ‘মব’— উদ্দেশ্য ছিল একটাই, এই হত্যাকাণ্ডকে গণপিটুনি বলে চালিয়ে দেওয়া।

নিহত ব্যক্তির নাম মো. সোহাগ। বয়স ৩৫-এর কাছাকাছি। পুরান ঢাকার রজনী বোস লেনের ভাঙারি দোকান ‘সোহানা মেটাল’-এর মালিক ছিলেন তিনি। হত্যার নেপথ্যে রয়েছে চাঁদা, দখল, আধিপত্য আর প্রতিহিংসার ভয়াবহ হিসাব।

সূত্র জানায়, রাজনৈতিক যোগাযোগের সুবিধা নিয়ে এলাকায় চাঁদা তুলতেন মাহমুদুল হাসান মহিন নামে এক ব্যক্তি। সোহাগ নিয়মিত চাঁদা দিলেও সম্প্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি দিতে রাজি না হওয়ায় সম্পর্কের অবনতি ঘটে। গত ৭ জুলাই বড় অঙ্কের চাঁদা না দেওয়ায় মহিন ও তার সহযোগী টিটন গাজী সোহাগকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

প্রথমে পরিকল্পনা করা হয়, দোকানেই সোহাগকে খুন করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে কৌশল পাল্টে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মিটফোর্ড হাসপাতালের গেটের সামনে এনে মারধর করে তাকে হত্যা করা হবে। এতে মনে হবে গণপিটুনি, আর খুনিরা বাঁচবে আইনগত ফাঁক দিয়ে।

ঘটনার দিন, ৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাতটি মোটরসাইকেলে ১৯ জন মিলে রজনী বোস লেনে আসে। দোকানে ঢুকে সোহাগকে টেনে বের করে মিটফোর্ডের গেটের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নির্মমভাবে পেটানোর পর পাথরের মতো কনক্রিট দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় তাকে। এরপর মরদেহ টেনে এনে উল্লাসে লাফিয়ে ‘মব’ সাজানো হয়।

পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে এখন পর্যন্ত মূলহোতা মহিন, টিটন গাজী, তারেক রহমান রবিন, আলমগীর, লম্বা মনির, সজিব বেপারি ও রাজিব বেপারি—এই সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে রবিন ও মহিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশের ভাষ্যমতে, হত্যার পরিকল্পনা ছিল সুপরিকল্পিত। ছোট মনিরের মাধ্যমে অস্ত্র সংগ্রহ করা হলেও সেটি ব্যবহার না করে গণপিটুনির নাটক সাজানো হয়। যাতে আইন ও জনমতকে বিভ্রান্ত করে হত্যাকে ভিন্ন খাতে নেওয়া যায়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়, হত্যার ভয়াবহতা ও কৌশল দেখে বোঝা যায়, হত্যাকারীরা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ‘মব লিনচিং’-এর ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক অ্যাম্বুলেন্স চালক জানান, “সোহাগকে গেটের সামনে মারছে দেখে থেমে গিয়েছিলাম। মহিন সবাইকে ডাকছিল—‘ও বাঁচলে আমরা শেষ’। তখন অনেকে গিয়ে মারে। পরে টেনে নিয়ে গেটের ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়।”

পুলিশের তদন্তে আরও উঠে এসেছে, মহিন ও তার গ্রুপ চেয়েছিল হত্যার মাধ্যমে একটি বার্তা দিতে— এলাকাজুড়ে কারও সাহস না থাকে চাঁদার বিরুদ্ধে কথা বলার। আর এই ভয় তৈরির জন্যই সোহাগকে জনসমক্ষে মব বানিয়ে খুন করা হয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “এটি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ ও পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। কারো রাজনৈতিক পরিচয় বা ক্ষমতা থাকলেও ছাড় দেওয়া হবে না।”

তবে ঘটনার সময় হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব জানান, “সেদিন আনসার সদস্যরা রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছেন। ঘটনার সময় ৩ নম্বর গেটে দায়িত্বে কোনো সদস্য ছিল না। সুতরাং অবহেলার প্রশ্ন ওঠে না।”

এদিকে, সোহাগ হত্যার পর রজনী বোস লেনের ‘সোহানা মেটাল’ বন্ধ। পাশের দোকানগুলোতেও ভয়, আতঙ্ক। একজন ব্যবসায়ী বলেন, “মহিনের মতো আরও কয়েকটা গ্রুপ আছে। ও ধরা পড়লেও ভয় কাটেনি। আমরা আতঙ্কে আছি, কখন কার টার্গেট হয়।”

পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সোহাগ হত্যার তদন্ত করছে ডিবি দক্ষিণ বিভাগ। সব আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিতের প্রক্রিয়া চলছে।

ঢাকার বুকে এমন প্রকাশ্য, পরিকল্পিত, ‘মব’ সেজে উল্লাসে হত্যা এক নজরে যেন মব নয়, ছিল এক মাফিয়া-বার্তা! যা কাঁপিয়ে দিয়েছে শুধু একটি এলাকা নয়, পুরো শহরকে।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট