কল্যান রায় (জয়ন্ত) : যশোরের কেশবপুর উপজেলার মধ্য কূল গ্রামের নারী উদ্যোক্তা রোকেয়া বেগম জলাবদ্ধ জমিতে ভাসমান বেড পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে আশার আলো দেখছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থা আশার সহযোগিতায় তিনি এই বিশেষ পদ্ধতিতে সফলতার পথে এগিয়ে চলেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রোকেয়া বেগমের বাড়ির পাশের খাল পানিতে টইটম্বুর। এই জলমগ্ন জায়গায় কলাগাছের ভেলা ও কচুরিপানার স্তূপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ধরনের ভাসমান বেড। এসব বেডের উপর উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করছেন লাউ, ঝিঙে, বরবটি, কচুর লতি, লালশাক, ডাটাশাকসহ নানা ধরনের সবজি। তাকে দেখে আশপাশের অনেক কৃষক ভাসমান বেডে সবজি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।
রোকেয়া বেগম জানান, কেশবপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ ও ‘আশা’ সংগঠনের সহায়তায় ৬টি ভাসমান বেড তৈরি করেছেন। প্রতিটি বেড ১৮ হাত লম্বা, ২.৫ হাত চওড়া এবং ৩ হাত উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে। কচুরিপানা স্তরে স্তরে সাজিয়ে এসব বেড তৈরি করা হয়। তিনি আরও জানান, এসব বেড থেকে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকার লালশাক, ডাটাশাক ও বরবটি বিক্রির আশা করছেন। এ প্রদর্শনী প্রকল্পে খরচ হয়েছে মাত্র ৬ হাজার টাকা।
রোকেয়া বেগম বলেন, “ভাসমান বেড পদ্ধতিতে চাষ করে সমতল জমির তুলনায় কয়েক গুণ লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু বর্ষা মৌসুম নয়, অন্যান্য সময়েও এই পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন চালিয়ে যেতে চাই। অন্য কৃষকদেরও উৎসাহ দিচ্ছি যেন তারা এই পদ্ধতিতে এগিয়ে আসে।”
এ বিষয়ে আশা-যশোর সদর জেলার এগ্রি উইংয়ের টেকনিক্যাল অফিসার (কৃষি) নীতিকেশ মন্ডল জানান, “ভাসমান বেড পদ্ধতিতে সবজি চাষ একটি লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি। নিচু এলাকা, খাল ও বিলে বর্ষা মৌসুমে জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জমি সাধারণত জলমগ্ন থাকে। সেখানে ফসল চাষ করা সম্ভব নয় বলে এই পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। এতে কম খরচে, কম সার ও কম বালাইনাশক ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন সম্ভব।”
তিনি আরও জানান, এই পদ্ধতি শুধু কৃষকদের আয় বাড়াবে না, বরং পরিবেশ রক্ষায়ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, রোকেয়া বেগমের এই সফল উদ্যোগ অন্য কৃষকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।